প্যারিস, ফ্রান্স থেকে: শনিবার পর্দা নামছে জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-২১’এর। ১১ ডিসেম্বর সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্যারিস এগ্রিমেন্ট বা আউটকাম সাক্ষরের ব্যাপারে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একমত না হওয়ায় সম্মেলনের সময় একদিন বাড়ানো হয়।
তবে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) একটি চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এই চুক্তির বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার রাতভর কপ প্রেসিডেন্ট লরেন্ট ফ্যাবরিয়াস আলাদা আলাদা দেশের সঙ্গে কথা বলেছেন- একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে। শনিবার সকালে শুরু হয় ফের আলোচনা।

undefined
এদিনে বেলা ১২টায় চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে প্রথম প্লানারি মিটিং শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসায়া ওলাদ।
বৈঠকে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রর মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কপ প্রেসিডেন্ট লরেন্ট ফ্যাবরিয়াস।
জাতিসংঘ মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেন, পৃথিবীকে বাচাঁনোর বিষয়টি সবার মাথায় রাখতে হবে। আপনাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে পৃথিবীর ঐতিহ্য, নারী শিশুদের বিষয়ে।
তিনি বলেন, সময় এসেছে রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও আলোচকদের কেবল নিজ রাষ্ট্রের লাভ-ক্ষতির চিন্তা না করে, পুরো বিশ্বের কথা চিন্তা করার। আমাদের সিদ্ধান্তের দিকে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের জীবন ও ভবিষ্যত নির্ভর করছে। আমাদের বাধা হাত এখন খুলে দিতে হবে। পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে।

undefined
মুন বলেন, গত নয় বছর আমি জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে গিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি তাদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সতর্ক করেছি ও ক্লিন এনার্জি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিন হাউজ গ্যাস কমাতে উৎসাহ দিয়েছি। তারা আমার কথা শুনেছেন এবং একটি নিরপেক্ষ, সহজ ও গ্রহণযোগ্য চুক্তির কথা বলেছেন।
কিন্তু বিষয়টি সহজ নয়। এটা একটি জটিল বিষয়। তবে আমরা অবশ্যই একমত হতে আর সময় নেবো না। আজ অবশ্যই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা গত ২ সপ্তাহ ধরে আলোচনা করছি। এটা একটা ভালো দিক যে বিশ্ব নেতারা একদিন সময় বাড়িয়ে সমোঝেতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, যোগ করেন তিনি।
মুন বলেন, আমি বিশ্বকে বাঁচানোর জন্য কেবল উন্নত বিশ্বকেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ‘মাইগ্রেশন’ ও ‘অ্যাডাপ্টেশন’র অর্থায়নের দায় নিতে বলবো। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা আপনাদের সামর্থ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন। আমি সবার জমা দেওয়া ক্লাইমেট প্লানকেই সম্মান করছি।

undefined
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ওলাদ তার বক্তব্যে বলেন, সবাইকে কখনোই খুশি করা যায় না। তাই সবার বক্তব্যই হয়তো গ্রহণ করা যাবে না। তবে ভবিষ্যত বিশ্বের কথা মনে রেখে সবাইকেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।
সম্মেলনে যোগ দেওয়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। তবে সবাই মোটামুটি একমত, একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়ে।
তিনি বলেন, কোনো একটি দেশও যদি এতে দ্বিমত পোষণ করে তবে তা আটকে যাবে। এরইমধ্যে আমেরিকা এই চুক্তি বা সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসে আছে।
প্যারিস সময় বিকেল পৌনে ৪টায় ফের দ্বিতীয় প্লানারি বৈঠকে বসবেন সবাই।
এর আগে চূড়ান্ত চুক্তি নিয়ে সিভিল সোসাইটির বৈঠক হবে প্যারিস সময় বেলা ২টায়।
রেজাউল করিম চৌধুরীর ভাষায় প্লানারি মিটিং কখনোই ‘নেগোশিয়েশন’ নয়। মাঝের সময়টাতেই এই পর্ব শেষ হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
আরএম/এটি
** কপ-এ উত্তেজনা, উপেক্ষিত বাংলাদেশ
** ১০ হাজার সংবাদকর্মীর মিডিয়া রুম
** কপ-২১ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে ধোঁয়াশা
** বাংলানিউজের মাসুদ এখন প্যারিসে