ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ছাত্র ভিসা ও পহেলগাঁও হামলার যোগসূত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২২, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
পাকিস্তানের ছাত্র ভিসা ও পহেলগাঁও হামলার যোগসূত্র ২০১৮ সালে ছাত্র ভিসায় পাকিস্তানে গিয়েছিলেন আদিল আহমেদ থোকার

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে প্রাণঘাতী হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে আদিল আহমেদ থোকারের নাম বলা হচ্ছে। গত ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় তিনি নিহত হন।

জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবেহারার গুরে গ্রামের বাসিন্দা আদিল আহমেদ থোকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যান। ছয় বছর পর তিন থেকে চারজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন।

আদিল তার বাড়ি ছাড়েন ২০১৮ সালে। স্টুডেন্ট ভিসায় তিনি পাকিস্তানে যান। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, যাওয়ার আগে থেকেই আদিলের মাঝে মৌলবাদী আচরণ দেখা দেয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভারত ছাড়ার আগেই তিনি দেশটির সীমান্তের ওপার থেকে পরিচালিত নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পাকিস্তানে গিয়ে আদিল আত্মগোপনে যান। পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। প্রায় আট মাস ধরে তার খোঁজ মেলেনি। তার ডিজিটাল কার্যকলাপে নজর রাখা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে হারিয়ে ফেলে। বিজবেহারায় তার বাড়িতে একই তালে নজরদারি অভিযান চলে। এতেও বড় সাফল্য মেলেনি।

গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, ওই সময়ে তিনি আদর্শিক এবং আধাসামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। তিনি পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা’র সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

২০২৪ সালের শেষের দিকে গোয়েন্দাদের কাছে আদিল আবার দৃশ্যমান হন। কিন্তু এবার তা ভারতের ভেতরে। গোয়েন্দা সূত্র অনুসারে, থোকার ২০২৪ সালের অক্টোবরে দুর্গম পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পার হন। খাড়া পাহাড় আর ঘন বনে ঢাকা ভূখণ্ডটিতে টহল দেওয়া খুব কঠিন। সেখানকার সীমান্ত ঐতিহাসিকভাবে অবৈধ পারাপারের জন্য ব্যবহার করা হয়।

তখন আদিলের সঙ্গে তিন-চারজনের একটি ছোট দল ছিল। দলটিতে হাশিম মুসা নামের একজন পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন। সুলেমান নামেও পরিচিত ওই ব্যক্তি পহেলগাঁও হামলার আরেক প্রধান অভিযুক্ত। এখন মনে করা হচ্ছে, মুসার ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ সুগম করতে আদিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবেশের পর আদিল পুরোপুরি স্বনির্ভর জীবনযাপন করে গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে সফল হন। সূত্র জানায়, অনন্তনাগে যাওয়ার আগে কিস্তওয়ারে তার ওপর কিছুক্ষণ নজর রাখা হয়। সম্ভবত তিনি ত্রালের পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে অথবা অতীতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অভ্যন্তরীণ পথ ব্যবহার করেন।

অনন্তনাগে আদিল একবার আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান বলে মনে করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তিনি অন্তত একজন পাকিস্তানি নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি আদিলের সঙ্গে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। সম্ভবত তারা তখন বনের ভেতর কোনো শিবিরে বা বিচ্ছিন্ন গ্রামের আস্তানায় ছিলেন।

আদিল বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। তখন তিনি নিষ্ক্রিয় সন্ত্রাসীদের ছোট গ্রুপের সঙ্গে আবার যোগাযোগ শুরু করেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গোয়ন্দা কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, তিনি একটি উপযুক্ত স্থান এবং ব্যাপক হতাহত ও বড় প্রভাব ফেলার মতো হামলা চালানোর সুযোগ খুঁজছিলেন, যা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।

আলোচিত হামলার সময়কালটি বার্ষিক অমরনাথ যাত্রা শেষ হওয়ার পর ওই অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে আবার চালু হওয়ার সঙ্গেও মিলে যায়। নিরাপত্তার কারণে আগে বন্ধ থাকা বৈসরান তৃণভূমিতে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে পর্যটকদের ভিড় আবার শুরু হয়। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো মনে করে, এটি আদিল আর তার দলকে সুযোগ করে দেয়।

২২ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে আদিলসহ হামলাকারীরা বৈসরানের আশেপাশের ঘন পাইন বন থেকে বেরিয়ে আসেন। অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে তারা পর্যটকদের জড়ো হওয়া এলাকার দিকে ছুটে যান।

বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, হামলাকারীরা হত্যা করার আগে কিছু ভিক্টিমকে তাদের ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে, তারা ভিক্টিমদের ইসলামিক আয়াত পাঠ করতে বলেন। যারা তা পারেননি বা দ্বিধান্বিত ছিলেন তাদের গুলি করা হয়। অনেক ভিক্টিমের মাথায় গুলি করা হয়।

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এখন নিশ্চিত করেছেন, হামলাকারী দলটিতে কমপক্ষে পাঁচজন ছিলেন। তারা তৃণভূমির মধ্যে তিনটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে লক্ষ্য করে ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ হয়ে যায়। পুরো হামলাটি দশ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে চালানো হয়। ওইটুকু সময়ের মধ্যে আক্রান্তদের বেশিরভাগের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় ঘোড়াচালক ছিলেন। ওই হামলায় দুজন নিরাপত্তা কর্মী, একজন নৌবাহিনীর এবং একজন গোয়েন্দা ব্যুরোর সদস্যও নিহত হন।

বৈসরানে ওই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজন প্রধান সন্দেহভাজনের মধ্যে আদিল আহমেদ থোকারের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। বাকি দুজনকে পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই। তিনজনের স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের ধরতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অনন্তনাগ, পহেলগাঁও এবং সংলগ্ন বনাঞ্চলজুড়ে জেলাব্যাপী তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে ত্রালের আদিল এবং আরেক অভিযুক্ত আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়। কর্মকর্তারা জানান, তল্লাশি অভিযানের সময় নিরাপত্তাকর্মীরা দেখেন, বাড়িগুলোতে বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছে। ওইসব বিস্ফোরক সম্ভবত ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য বা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাখা হয়।

হামলায় আসিফ শেখ গৌণ ভূমিকা পালন করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি সম্ভবত রসদ বা প্রযুক্তিগত সহায়তা দেন। তার জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত চলমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।