ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

ঢাকায় ট্রাক ঢুকছে গরু নিয়ে, বেরোচ্ছে মানুষ নিয়ে

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৪৫, জুন ১৪, ২০২৪
ঢাকায় ট্রাক ঢুকছে গরু নিয়ে, বেরোচ্ছে মানুষ নিয়ে

সাভার (ঢাকা): ঈদুল আজহার আনন্দ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে মানুষ রাজধানী ছাড়ছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ফিরছেন বাড়ি।

অনেকে আবার ভাড়া বাঁচাতে গরুর ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন।  

শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, উলাইল, সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড, ডিইপিজেড, শ্রীপুর, জিরানীবাজার স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, গরুবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করছে ঢাকায়। আর এসব ট্রাক ফিরে যাওয়ার সময় মানুষ ভর্তি করে ঢাকা ছাড়ছে।  

ট্রাক-পিকআপে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে পুলিশের বারণ থাকলেও, সেই চিত্র সড়কে দেখা যাচ্ছে না। আগের দিন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান চন্দ্রা এলাকায় যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা না করার আহ্বান জানান।  

গরুর ট্রাকে করে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজশাহী যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিক মারুফ মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিবারই ট্রাকে করেই গ্রামে ফিরি। এবারও গ্রামে যাওয়ার জন্য ট্রাকেই উঠেছি। বেতন পেয়ে হিসাব করে ভাড়ার টাকা রেখে সব টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছি। অল্প বেতনে সবার চাহিদা মেটাতে হয়। ঈদ যেন পরিবারের সবাই একসঙ্গে উদযাপন করতে পারি, অর্থের অভাবে যেন ঈদের আনন্দ মলিন না হয়, তাই একটু ঝুঁকি হলেও ট্রাকেই যেতে হয়।  

ট্রাকের আরেক যাত্রী আল-মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাকের ওপরে ত্রিপল দেওয়া থাকে। আমাদের যেতে একটু কষ্ট হলেও বাসভাড়ার প্রায় অর্ধেক টাকা বেঁচে যায়। এ টাকা দিয়ে বাবা কিংবা মাকে খুশি করতে পারি। ঢাকায় তো কষ্ট করতেই এসেছি। এতটুকু কষ্ট আমাদের জন্য কিছু নয়।

ঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, এমন যাত্রায় তো ঝুঁকি থাকবেই। তাছাড়া ঈদযাত্রায় এমনিতেও ঝুঁকি থাকে। আমি প্রতি ঈদেই ট্রাকে করে বাড়ি ফিরি। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তাই আল্লাহর নামে এবারও ট্রাকে উঠেছি।

ট্রাকচালক সুজন বাংলানিউজকে বলেন, আমি সবসময় পাথর পরিবহন করি। এবার ঈদে গরু নিয়ে গাবতলী গরুর হাটে এসেছিলাম। ট্রাকে যাত্রী নেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। ফেরার পথে এক যাত্রী থামিয়ে তার অসহায়ত্বের কথা জানান। ফলে ফ্রিতে তাকে ট্রাকে উঠাই। পরের স্ট্যান্ডে আসামাত্র যাত্রীরা হুড়মুড় করে ট্রাকে ওঠেন। নামতে বললে তারা রাগারাগি করে বলেন, তারা তো ফ্রি-তে যাবেন না, ভাড়া দেবেন। পরে ভাড়া মিটিয়ে রওনা করেছি। পুলিশ রাস্তায় ঝামেলা করলে যাত্রীদের নামিয়ে দেব।

এ নিয়ে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ট্রাক-পিকআপে যাত্রী উঠতে দিচ্ছি না। এ নিয়ে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এমন ট্রাক কিংবা পিকআপ দেখলেই যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছি। অনেককে মামলাও দেওয়া হচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। ট্রাক-পিকআপে যাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। এভাবে যাত্রা করে আনন্দের ঈদ যাতে বিষাদে পরিণত না হয়, সেজন্য আমাদের সবার ট্রাক ও পিকআপে যাত্রা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫  ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ